একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
কর্মকর্তাদের আগাম প্রস্তুত হতে বলেছে ইসি
অনলাইন ডেষ্ক
আপডেট সময়: ৮ জানুয়ারী ২০১৮ ১১:১৯ এএম:

বর্তমান সংসদের মেয়াদ অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো প্রায় এক বছর। কিন্তু নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগেভাগেই মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুত হতে বলেছে। গতকাল রবিবার তাঁদের সংসদ নির্বাচনের ম্যানুয়ালও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকাল আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক বৈঠক ও কর্মশালায় এ নির্বাচনের বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়। যদিও ইসি সচিবালয় থেকে বলা হয়েছে, এটি ভোটার সংশোধনী কর্তৃপক্ষের এক দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আসলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা আমরা জানি না। হঠাৎ করে নির্বাচনের আয়োজন করতেও হতে পারে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে। এই প্রস্তুতির জন্য অনেক কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে মূলত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে বৈঠকে বিগত সংসদ নির্বাচনের একটি করে ম্যানুয়াল সংশ্লিষ্টদের প্রদান করা হয়। বলা যেতে পারে এটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি।
২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি বর্তমান দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। সাংবিধানিকভাবে বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসাবে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্য নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ ঘোষণা করে।
ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকালে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের সব জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ৬৪ জেলার নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বৈঠক ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদে সংশোধনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মাঠ প্রশাসনকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গতকালের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, আমরা ইচ্ছে করলে সকল নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিভাইজিং অথরিটি করতে পারতাম। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আমরা নিয়েছি যাতে মানুষ ভালোভাবে বিষয়টি গ্রহণ করতে পারে, এ সম্পর্কে তারা জানতে পারেন। এ ছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেহেতু নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সাথেও সম্পৃক্ত থাকেন, তাই তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
প্রশাসনের নতুনদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সারাবছর আমরা নির্বাচন নিয়ে কাজ করে থাকি। আমাদের সামনে সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকে। আমাদের নির্বাচনটা সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য আপনাদের যথেষ্ট অবদান আছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের যে সব আইনকানুন আছে, আমাদের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রশাসক একাডেমি যাতে সেগুলো সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে সেজন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। বিশেষ করে প্রশাসন একাডেমিতে আমাদের নবীন কর্মকর্তা প্রথম থেকেই যাতে আমাদের নির্বাচনী আইনকানুন সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের তিন শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আরো জানান, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের আমরা একদিনের একটি ব্রিফিং দিয়েছি, এই খসড়া ভোটার তালিকাটি সঠিকভাবে যাতে রূপ পায়। এই ভোটার তালিকার উপরেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুতরাং আমরা চাই সামনে যে ভোটার তালিকাটি হবে সেটি যাতে নির্ভুল হয়।
জাতীয় নির্বাচনে বাজেট ৬০০ কোটি টাকা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেটের আকার বাড়ছে। প্রতি পাঁচ বছরে এই বৃদ্ধির হার ১০০ কোটি টাকা করে। গত নির্বাচনে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হলেও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের খাত ধরা হয়েছে ২৯টি। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে আইন-শৃঙ্খলায়। খাতওয়ারি অর্থ বরাদ্দের হার বিগত নির্বাচনের চেয়ে দ্বিগুণ বা অনেক ক্ষেত্রে তিন গুণ ও চার গুণ করা হয়েছে।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের বাজেট ছিল ৭২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই বাজেট ৯২ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। তবে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হয় ১৪৭ আসনে, বাকিগুলো অর্থাৎ ১৫৩ আসনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এই নির্বাচনে ২৯২ কোটি টাকা ব্যয় হয়।